মহামারির করোনাভাইরাস এর কারণে আটকে গেছে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি এবং নতুন পাঠ্যবই মুদ্রণ ও রচনা কার্যক্রম। রোববার (৭ জুন) থেকে অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করতে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয়ক বোর্ড থেকে প্রস্তাব করার হলেও তা হচ্ছে না। তবে এই কার্যক্রম আগামী জুলাই মাসের মাঝামাঝি শুরু হতে পারে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে সরকারি তত্ত্বাবধানে থাকা একাদশ শ্রেণির চারটি বই বিক্রির লক্ষ্যে দরপত্র কার্যক্রম এখন পর্যন্ত শুরুই করা হয়নি। এ চারটির মধ্যে এবার একটি নতুন করে বাজারে যাওয়ার কথা। বইটি রচনার কাজও শেষ হয়নি। মূলত করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ভর্তি কার্যক্রম ও পাঠ্যবই তৈরির কাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয়ক বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির মধ্যে একদশ শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে না। তবে আমাদের সকল প্রস্তুতি রয়েছে।’
তিনি বলেন, আগামী ৭ জুন থেকে অনলাইনে ভর্তি শুরু করতে মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব পাঠানো হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে ভর্তি শুরু করা ঠিক হবে না।
অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘ভর্তি কার্যক্রম অনলাইনে হলেও অনেক শিক্ষার্থী বাড়ির বাইরে বের হয়ে কম্পিউটার দোকানে, বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে ভিড় করে আবেদন করার চেষ্টা করবে। এতে করে ভাইরাসে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভবনা তৈরি হবে। যেহেতু ভর্তি হলেও ক্লাস শেষ শুরু হচ্ছে না তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে উচ্চ মাধ্যমিকের ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা হবে।’
তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হতে পারে। আর ক্লাস শুরু হতে পারে সেপ্টেম্বরে।
এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন শিক্ষার্থী। গতবছর পাস করেছিল ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৬৫ জন। গতবছর ভর্তি না হওয়া প্রায় আড়াই লাখ ছাত্রছাত্রী আছে। সে অনুযায়ী এবার কলেজ, মাদরাসা এবং কারিগরি প্রতিষ্ঠানে ১৯ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর ভর্তি হওয়ার কথা।
তবে সাধারণ যে সংখ্যক শিক্ষার্থী পাস করে তার অর্ধেক সংখ্যক বই ছাপানো হয়। বাকিরা পুরাতন বই পড়ে থাকে বলে ধরে নেয়া হয়। সেই হিসাবে এবার মোট ৯ লাখ করে চারটি বইয়ে ৩২ লাখ কপি ছাপানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
জানা গেছে, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ৩৯টি বই আছে। এর মধ্যে এতদিন তিনটি বই বাজারজাত করে আসছিল সরকার। দরপত্রের মাধ্যমে আগ্রহী প্রকাশকদের বাজারজাতের কাজ দেয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বিনিময়ে ১১ শতাংশ হারে রয়্যালটি নেয় সরকার। চলতি বছর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) নামের বইটিও সরকারিভাবে বাজারজাত করার সিদ্ধান্ত আছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অন্য ৩৬টির সঙ্গে এতদিন আইসিটি গ্রন্থটিও বেসরকারি প্রকাশকরা সরকারি কারিকুলামের আলোকে প্রণয়ন করে এনসিটিবি থেকে অনুমোদন নিতেন। কিন্তু আইসিটি গ্রন্থটি কারিকুলামের সঙ্গে ততটা মিল নেই। বিশেষ করে একেক প্রকাশক একেকভাবে গ্রন্থটি রচনা করেছেন। আবার অনেকে গ্রন্থটি দুর্বোধ্য করে রচনা করেছেন। এসব বিষয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনেও আলোচনা হয়েছে। এরপরই গ্রন্থটি সরকারিভাবে রচনা ও বাজারজাতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে অন্যান্য কাজের মতো একাদশ শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের দরপত্রের কাজ কিছুটা ধীরগতিতে এগোচ্ছে। তবে আগামী সপ্তাহে এ নিয়ে কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর যে গ্রন্থটি এবার সরকারিভাবে বাজারজাত করার কথা সেটি রচনার কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। ডিসি সম্মেলনে বইটির মান নিয়ে আপত্তি উঠায় সরকারিভাবে প্রণয়ন ও বাজারজাতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, এবার এখন পর্যন্ত উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেয়া হয়নি। এজন্য হয়তো কাজ শেষ করার ক্ষেত্রে আরও কিছুটা সময় পাওয়া যেতে পারে।
এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানান, অন্যান্য বছর গড়ে একমাস সময় দেয়া হয় বই মুদ্রণ ও বাজারজাতের জন্য। সর্বশেষ গতবছর ১৩ দিন সময় দেয়া হয়েছিল। সেই হিসাবে একাধিক প্রকাশককে কাজ দেয়া হলে দুই সপ্তাহে বই ছাপানো ও বাজারজাত করা সম্ভব বলে মনে করেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা।
তবে প্রকাশকরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে এবার বৈরী অবস্থা বিরাজ করছে। শ্রমিক সংকট আছে। বইয়ের কাঁচামাল কাগজ, কালি ও অন্যান্য সামগ্রী কেনাবেচা স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। বাঁধাই শ্রমিকেরও সংকট আছে। সবমিলিয়ে বইয়ের কাজ শেষ করতে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সময় কিছুটা বেশি লাগবে। তারা বলছেন, সেই হিসাব করেই এবার বইয়ের মুদ্রণ প্রক্রিয়া শুরু করা প্রয়োজন।
ফাইল ছবি