ছোট্ট একটি দোকানে কাপড় ও খেলনার ব্যবসা দিয়ে শুরু তার কর্ম জীবন। সেখান কম্পিউটার বসিয়ে গড়ে তোলেন বেসিক বিজ মার্কেটিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান। আউট সোর্সিং মার্কেটিংয়ের ওই প্রতিষ্ঠানের আড়ালেই চলছিল তার বিট কয়েন ব্যবসা।
তার নাম ইসমাইল হোসেন সুমন ( ৩২) তবে তাকে অনেকেই চিনেন কয়েন সুমন নামে।
বাংলাদেশে অবৈধ বিট কয়েন ব্যবসার মূলহোতা ইসমাইল হোসেন সুমন ওরফে কয়েন সুমনের রয়েছে একাধিক ভার্চুয়াল ওয়ালেট। যেখানে মজুদ রয়েছে বিট কয়েনে অর্জিত লক্ষাধিক ডলার। শুধু তাই নয়, বিট কয়েন ব্যবসার মাধ্যমে তিনি গড়েছেন ফ্ল্যাট, প্লট, সুপার শপসহ নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
সোমবার (৩ মে) বিকেল সোয়া পাঁচটায় কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব সদর দফতরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকার বেসিক বিজ মার্কেটিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-১-এর একটি দল।
সেখান থেকে বাংলাদেশে অবৈধ বিট কয়েন ব্যবসার মূলহোতা ও অনলাইনে প্রতারণার অভিযোগে ইসমাইল হোসেন সুমন ওরফে কয়েন সুমনসহ ১২ জনকে আটক করে দলটি।
আটক অন্যরা হলেন- আবুল বাশার রুবেল (২৮), আরমান পিয়াস (৩১), রায়হান আলম সিদ্দিকি (২৮), মো. জোবায়ের (১৮), মেহেদী হাসান রাহাত (২৪), মেহেদী হাসান (১৯), রাকিবুল হাসান (২৩) রাকিবুল ইসলাম (২২), সোলাইমান ইসলাম (২১), মো. জাকারিয়া (১৮), আরাফাত হোসেন (২২)।
অভিযানকালে তাদের কাছ থেকে ২৯টি ডেস্কটপ কম্পিউটার, ৩ টি ল্যাপটপ, ১৫টি মোবাইল ফোন, একটি ট্যাবলেট ফোন ও বিবিধ নথিপত্র জব্দ করা হয়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, চক্রটির মূল হোতা ইসমাইল হোসেন সুমন ওরফে কয়েন সুমন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স পাশ করেন। এরপর ২০১৩ সালে ছোট্ট একটি দোকানে বাচ্চাদের খেলনা ও কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, সেখান থেকেই তিনি শুরু করেন বিট কয়েনের ব্যবসা। বেসিক বিজ মার্কেটিং নামে অনলাইন আউট সোর্সিং প্রতিষ্ঠান। আর এর আড়ালে অবৈধ বিট কয়েন ও অনলাইন বিভিন্ন প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছিলেন সুমন।
ওই ব্যবসার সত্ত্বাধিকারী ও মূলহোতা সুমন শুরুতে একটি ছোট অফিস থাকলেও তা বড় হয়, বাড্ডায় তিনটি ফ্লোরে ৩২ জন কর্মচারী নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন তিনি। প্রতিষ্ঠানটি তিনটি শিফটে ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে।
ভার্চুয়াল ওয়ালেটের মাধ্যমে অবৈধ ও প্রতারণামূলক ব্যবসা বিট কয়েনের মাধ্যমে সুমন বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার ঢাকায় দুটি ফ্ল্যাট, প্লট ও সুপার শপের ব্যবসা রয়েছে।
সুমনের রয়েছে একাধিক ভার্চুয়াল ওয়ালেট। যেখানে বিট কয়েনের মাধ্যমে অর্জিত লক্ষাধিক ডলার মজুদ রয়েছে। গত এক বছরে তিনি বিট কয়েনের মাধ্যমে অবৈধভাবে ১২ থেকে ১৫ লাখ ডলার লেনদেন করেছেন। যা টাকার অংকে ১০ কোটি থেকে সাড়ে ১২ কোটি টাকা হবে।
ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতিতে জড়িত সুমন
আটক ইসমাইল হোসেন সুমন বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ই-মার্কেটিং সাইটে আকর্ষণীয় মূল্যে বিজ্ঞাপন দিতেন। পরবর্তীতে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করতেন। কেউ যদি তার পণ্য ক্রয় করতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতেন তা তিনি তা হ্যাক করতেন ও টাকা আত্মসাৎ করতেন।
র্যাবের জানায়, বাংলাদেশে বিট কয়েন নিষিদ্ধ তবে বেশকিছু দেশেই বিট কয়েন বৈধ। সম্প্রতি ভারতে এটা বৈধ করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরেও বৈধ। এসব দেশের সঙ্গে লেনদেন রয়েছে বা দেশীয় বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসায়ী এবং আন্তর্জাতিক জুয়ারিদের কাছে বিট কয়েন লেনদেন ও বিক্রি করতেন সুমন।
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, বিট কয়েনের ঘটনায় আটক অপর ১১ জন সুমনের প্রতারণা, জালিয়াতি ও অবৈধ বিট কয়েন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ও সহযোগী। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।