টিউলিপ ফুটেছে শ্রীপুরের সেই বাগানে

প্রকাশিত: ২:১৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২১

টিউলিপ – তুরস্কের জাতীয় ফুল যা এখন অনেক দেশেই দেখা যায়। বর্তমানে বিশ্বে নেদারল্যান্ডস টিউলিপ ফুল উৎপাদনকারী প্রধান দেশ। টিউলিপ ঘিরে সেখানে গড়ে উঠেছে শিল্পকারখানা। দেশটি প্রতিবছর উদযাপন করে টিউলিপ উৎসব। শীতপ্রধান দেশ ছাড়া এশিয়া মহাদেশের ভারত, আফগানিস্তান ছাড়া এমন দৃষ্টি জুড়ানো টিউলিপ ফুলের দেখা মেলে না। একসময় ষড় ঋতুর বাংলাদেশে এই ফুল চাষের কথা কল্পনাও করা যেত না।

তবে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছেন গাজীপুরের এক ফুলচাষি। গতবছর প্রথমবারের মতো দেশে টিউলিপ ফুটিয়ে দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছিলেন শ্রীপুর উপজেলার ফুলচাষি দেলোয়ার হোসেন। এবারের শীতে ফের টিউলিপ ফুটতে শুরু করেছে তার বাগানে।

দেলোয়ার হোসেন তার টিউলিপ ফুল বাগানের নাম দিয়েছেন ‘মৌমিতা ফ্লাওয়ারস’। এর আগে জার্বেরা, চায়না গোলাপ ও বিদেশি বিভিন্ন ফুল চাষে সফল হয়েছেন তিনি।

সফল ফুল চাষি হিসেবে ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক পান দেলোয়ার। তার দাবি, দেশে প্রথমবারের মতো ভাইরাসমুক্ত সবজির চারা উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেন তিনি।

ফুলচাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের দেশে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চাহিদা মিটাতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ফুল আমদানি করা হয়। ফুল চাষে জড়িয়ে আছে কৃষি অর্থনীতির একটি অংশ।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ফুল চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠলেও আমরা পিছিয়ে। অর্থনীতি ও চাহিদার কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিদেশি ফুল দিয়ে আমার স্বপ্নযাত্রা শুরু। নানা প্রতিবন্ধকতার পরও থেমে থাকিনি।

এরই মধ্যে পেয়ে যাই একটির পর একটি সফলতা। জার্বেরা, চায়না গোলাপের পর টিউলিপ ফুল ফুটিয়ে গতবছর পেয়েছিলাম নতুন সফলতা।

পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির টিউলিপ থাকলেও গত বছরের মতো এবারও নেদারল্যান্ডস থেকে এক প্রজাতির চার রঙের বিশ হাজার টিউলিপ বাল্ব এনে তিনটি বাগানে রোপণ করেন গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। গাজীপুরে সফল হওয়ার পর দেশের অন্যান্য স্থানে সম্ভাবতা ঝাচাইয়ের জন্য চুয়াডাঙ্গায় তিন হাজার ও ঠাকুরগাঁওয়ে সাড়ে তিন হাজার বাল্ব রোপণ করা হয়। বাকি সাড়ে তের হাজার বাল্ব তার গাজীপুরের মৌমিতা ফ্লাওয়ার বাগানে রোপণ করা হয়।

এ কয়েকদিন পরিচর্যা শেষে চলতি সপ্তাহর প্রথম থেকেই গাজীপুরে টিউলিপ ফুল ফোটা শুরু হয়। যদিও অন্য দুটি স্থানে এখনো ফুল ফুটেনি। আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে ২০-২২ দিনেই ফুটে টিউলিপ ফুল। তিনি আরও বলেন, টিউলিপ ফুল ফুটতে সাধারণত ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়।

তাই শীত এলাকাগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ঠাকুরগাঁও ও চুয়াডাঙ্গায় তিনি পরীক্ষামূূলক বাগান করেছেন। গত বছর টিউলিপ ফুল ফুটিয়ে সফল হওয়ার পর এবারের মৌসুমে তার ব্যাপকভাবে টিউলিপ ফুল বাগান করার ইচ্ছে ছিল।

কিন্তু করোনার কারণে সেটা আর হয়ে উঠেনি। তবে তার আশা- এক সময়ে টিউলিপময় ভালোবাসার ছোঁয়া তিনি সারাদেশেই ছড়িয়ে দিতে পারবেন।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের ফুল গবেষক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন খান বলেন, টিউলিপ সাধারণত শীতপ্রধান অঞ্চলের ফুল। আমাদের দেশে শীত মৌসুমে অনেকেই বাসাবাড়ির টবে বা শখের বশে টিউলিপ ফুলের চাষ করেন। তবে ফুল পাওয়া যায় কালেভদ্রে।

কিন্তু দেলোয়ারের বাগানে টিউলিপ ফুল ফোটায় নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। দেশে বাণিজ্যিকভাবে এখনো এই ফুল চাষ শুরু হয়নি। তবে শীত মৌসুমে আবহাওয়া ফুলের অনুকূলে থাকলে টিউলিপ ফুলের চাষ করা যায়। বিশেষ করে উত্তরের জেলাগুলোতে এই ফুল চাষ উপযোগী। দেশের কৃষকদের মনে নতুন করে টিউলিপ ফুল চাষের স্বপ্ন বুনে দিয়েছেন ফুলচাষি দেলোয়ার।

গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাহবুব আলম বলেন, বর্তমানে উচ্চমূল্যে টিউলিপ ফুল আমদানি করে আমাদের দেশের চাহিদা মেটাতে হয়। সফল ফুলচাষি দেলোয়ারের বাগানে গত বছরের মতো এবারও টিউলিপ ফুল ফোটায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আশা করা যায়- চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষি অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে টিউলিপ।