ভারতে ভয়াবহ তুষার ধসে নিহত ১৪, নিখোঁজ ১৭০

প্রকাশিত: ২:৫৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১

ভারতের উত্তরাখণ্ড ভয়াবহ তুষার ধসের ঘটনায় ১৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, এছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন আরো ১৭০ জন।

রোববার রাজ্যটির চামোলি জেলার জোশিমঠে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

তুষার ধসের ঘটনায় অলকনন্দা ও ধউলিগঙ্গা নদীতে প্রবল হড়পা বান দেখা দেয়, পানির তোড়ে পাঁচটি ঝুলন্ত সেতু ভেসে যায়, ঘরবাড়ি ও নিকটবর্তী এনটিপিসি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়; ঋষিগঙ্গার কাছে একটি ছোট জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রও ধ্বংস হয় বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করে জানিয়েছেন, তার সঙ্গে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর কথা হয়েছে। তিনি পুরো বিষয়টির উপর নজর রাখছেন। মোদি লেখেন, ‘পুরো দেশ উত্তরাখণ্ডের পাশে রয়েছে। উত্তরাখণ্ডের বিপন্নদের জন্য প্রার্থনা করছে দেশবাসী। আমি নিজে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছি। উদ্ধার কাজের প্রতি মুহূর্তের খবর রাখছি আমি।’

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ টুইটারে জানিয়েছেন, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এরইমধ্যে জোশীমঠে ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। এই সঙ্কট কালে দেবভূমিকে সবরকম সাহায্য করা হবে। এরপর আরও একটি টুইট করে তিনি জানান, ‘বিপর্যয় বাহিনীর আরও কয়েকটি দলকে দিল্লি থেকে বিমানে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঘটনাস্থলের কাছে’।

উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত রবিবার দুপুরে ধসে বিপর্যস্ত এলাকাগুলির তথ্য জানার জন্য সাহায্য চাওয়ার নম্বর (হেল্পলাইন) প্রকাশ করেছেন।

ঘটনাস্থলে জাতীয় ও রাজ্য দুর্যোগ মোকাবেলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ভারত-তীব্বত সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কয়েকটি টিমও মোতায়েন করা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী ৬০০ সৈন্য ও দেশটির নৌবাহিনী সাতটি ডুবুরি দল পাঠিয়েছে।

যে ১৭০ জন নিখোঁজ রয়েছেন তাদের মধ্যে এনটিপিসির ১৪৮ জন কর্মী ও ঋষিগঙ্গার ২২ জন রয়েছেন।

এনডিটিভি জানায়, চামোলি জেলার তপোবনের কাছে একটি বিদ্যুৎপ্রকল্পের সুড়ঙ্গের মধ্যে কাজ করছিলেন ১৬ জন শ্রমিক, বানের সঙ্গে আসা কাদা ও পাথরে ওই সুড়ঙ্গের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। তাদের বেঁচে থাকার সম্ভবনা নিয়ে প্রবল আশঙ্কার মধ্যেই তল্লাশি অভিযান শুরু করেন ভারত-তীব্বত সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় এক একে তাদের সবাইকেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ ওই সুড়ঙ্গ থেকে তাদের উদ্ধারে রাতভর কাজ করে উদ্ধারকারী দলগুলো।

নিকটবর্তী আরেকটি সুড়ঙ্গে আরও বেশ কয়েকজন শ্রমিক আটকা পড়ে আছেন। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তবে শেষ খবর পর্যন্ত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি উদ্ধারকারীরা।

এ পর্যন্ত ১৪টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত অন্তত ছয় জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রোববার স্থানীয় সময় রাতে ভারতের জাতীয় সঙ্কট ব্যবস্থাপনা কমিটি (এনসিএমসি) এক বৈঠকের পর জানায়, কেন্দ্রীয় পানি কমিশন থেকে পাওয়া তথ্যে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে এই মূহুর্তে নদীর নিম্নপ্রবাহে বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই। নদীর বেড়ে যাওয়া পানির উচ্চতাও স্বাভাবিক হয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন তারা।

আশপাশের গ্রামগুলোও আর বিপদের ঝুঁকিতে নেই বলে বৈঠকের পর জানিয়েছে এনসিএমসি।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে। জোশিমঠে ৩০ শয্যার একটি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি শ্রীনগর, ঋষিকেশ, জলিগ্রান্ট ও দেরাদুনের হাসপাতালগুলোকে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে।

ঋষিকেশ ও হরিদ্বারে লোকজনকে গঙ্গা নদীর তীরে যেতে বাধা দেয়া হয়েছে। এখানে দুটি বাঁধের সব পানি ছেড়ে দিয়ে হড়পা বানের তোড় মোকাবেলার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

এর আগে ২০১৩ সালে উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথে কয়েকদিনের প্রবল বৃষ্টির পর বিশাল হড়কা বান ও ভূমিধসের ঘটনায় পাঁচ হাজার ৭০০ লোকের মৃত্যু ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। ২০০৪ সালের প্রলয়ঙ্করী সুনামির পর এটি ছিল ভারতের অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এ ঘটনায় তিন হাজার ৫৮১ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত বিখ্যাত কেদারনাথ মন্দিরে একটি অংশ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

২০১৯ সালে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ণের কারণে ২১ শতক শুরু হওয়ার পর থেকে হিমালয়ের হিমবাহগুলো দ্বিগুণ গতিতে গলছে। জলবায়ু পরিবর্তন হিমালয়ের হিমবাহগুলোকে দ্রুত সঙ্কুচিত করে তুলছে, ফলে সংলগ্ন দেশগুলোর শত শত কোটি মানুষের পানি সরবরাহ হুমকির মধ্যে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা।