য়মনসিংহে নভেল করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গতকাল পর্যন্ত এ জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৮৫০ জন। আক্রান্তের দিক দিয়ে পুরো জেলায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভালুকা। এ উপজেলায় আক্রান্তের অর্ধেকই পোশাক শ্রমিক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে পোশাক কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তবে শ্রমিকরা যাওয়া-আসার পথে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। এ ব্যাপারে শ্রমিকদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে।
জানা গেছে, ময়মনসিংহের ১৩টি উপজেলার মধ্যে সদর উপজেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, ৩৬০ জন। এর পরই ভালুকার অবস্থান। গতকাল পর্যন্ত এ উপজেলায় ১৫৪ জনের শরীরে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিক রয়েছেন ৮২ জন, যা মোট সংক্রমিতের ৫৩ শতাংশ। শিল্পাঞ্চল হওয়ায় প্রতিদিনই এ উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গত বুধবার রাতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের পিসিআর পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষায় ভালুকায় নতুন করে আরো ১৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ জনই কারখানা শ্রমিক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভালুকা উপজেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ১৯ এপ্রিল। এরপর ৪৮ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ জনে পৌঁছায়। ওই সময়ে আক্রান্তদের মধ্যে পোশাক শ্রমিক ছিলেন মাত্র তিনজন। পরের তিনদিনেই আরো ৫১ জনের শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়, যার ৩৬ জন পোশাক কর্মী। আর এর পরের দুইদিনে শনাক্ত হয় ৫৩ জনের। এদের মধ্যে কারখানা শ্রমিক ৪৩ জন।
সূত্র আরো জানায়, ৪ জুন থেকে উপজেলার কারখানাগুলোয় ব্যাপকভাবে করোনা সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হতে থাকে। ওইদিন তিনজন নারীর করোনা শনাক্ত হয়। তিনজনই পোশাক শ্রমিক। পরদিন উপজেলায় ১৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে আটজন পোশাক কারখানার শ্রমিক। তারা সবাই স্কয়ার ফ্যাশন কারখানায় কাজ করেন। এরপর ৬ জুন উপজেলায় ১১ জনের করোনা শনাক্ত হয়, যাদের আটজনই ছিলেন পোশাককর্মী। তারা এসকিউ ও স্কয়ার ফ্যাশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কর্মরত। ৭ জুন করোনা শনাক্ত হওয়া ২১ জনের মধ্যে ২০ জনই তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক। গত মঙ্গলবার উপজেলায় সর্বোচ্চ ৩৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এদের মধ্যে ২৭ জন কারখানা শ্রমিক।
এ বিষয়ে স্কয়ার ফ্যাশনের কর্মকর্তা (অ্যাডমিন) মো. রফিক বলেন, কারখানার ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কাজ করানো হচ্ছে। স্কয়ার ফ্যাশনে সাড়ে ১১ হাজার শ্রমিক দুই শিফটে কাজ করতেন। এখন সেখানে ছয়টি শিফটে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। আবাসিক দুই হাজার শ্রমিক রয়েছেন। সেখানে কিন্তু একজন শ্রমিকও আক্রান্ত হননি। আমাদের যে ৪০ জন শ্রমিক আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের সঙ্গে প্রতিদিন দুবার করে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
ভালুকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাসুদ কামাল বলেন, গত দুইদিনেই এ উপজেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৫৩ জন। উপজেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫৪ জনে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১০ জন ও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, পোশাক কারখানার ভেতরে শ্রমিকদের দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করানোর চেষ্টা করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আসা-যাওয়ার পথে স্বাস্থ্যবিধি মানেন না শ্রমিকরা। ফলে উপজেলার শিল্প-কারখানাগুলোয় প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমিতের সংখ্যা।
সূত্রঃ বণিক বার্তা