ময়মনসিংহের এই গ্রামে এক কলস পানি যেন সোনার হরিণ!

প্রকাশিত: ৪:২৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২১

সুপরিচিত ময়মনসিংহ জেলা’র সীমান্তঘেঁষা ধোবাউড়া ও হালুয়াঘাট উপজেলা। পানি সংগ্রহে এ দুই উপজেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও বাঙালি পরিবারগুলোর দুর্ভোগ যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। বছরের পর বছর বৃষ্টির পানি আর শুষ্ক মৌসুমে গর্ত খুড়ে কর্দমাক্ত পানি সংগ্রহ করে চলে তাদের জীবন।

বর্তমানে অত্যাধুনিক টিউবওয়েল, গভীর নলকূপ, বিদ্যুৎচালিত মোটর ব্যবহার করে খাবার পানি সংগ্রহ করলেও প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদের বসবাসরত মানুষগুলো নিত্য-নৈমিত্তিকভাবে দূষিত ও কর্দমাক্ত পানি ব্যবহার করছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ধোবাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী ১নং দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের দীঘলবাগ, ঘিলাগড়া গোবরচুনা গ্রামের শতাধিক পরিবার ও পাশ্ববর্তী উপজেলার হালুয়াঘাটের ১নং গাজীরভিটা ইউনিয়নের ভুটিয়াপাড়া ও ডুমনিকুড়া এলাকার প্রায় ৫০টি পরিবার দৈনন্দিন সকল কাজে ব্যবহার করছেন উত্তোলিত কূয়োর পানি। এলাকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছে এক কলস পানি যেন সোনার হরিণ।

পানি সংগ্রহের উৎপত্তিস্থল স্থানীয় নেতাই নদী বা বানাইজুরিসহ কখনো শাখা নদী থেকে। বর্ষায় ওইসব কুয়া পানিতে তলিয়ে গেলে দূর দুরান্ত থেকে যেসব স্থানে নলকূপ আছে সেসব বাড়িতে গিয়ে পানি আনতে হয়।

এদিকে চৈত্র-বৈশাখ মাসের খড়ার সময় পানিও অনেক কমে যায়। এক কলসি পানি সংগ্রহ করতে লেগে যায় কয়েক ঘণ্টা।

 

ধোবাউড়া উপজেলার দীঘলবাগ গ্রামের হত দরিদ্র চেজিনা মান্দা ও রাসি রংদি আক্ষেপ করে বলেন, সারাজীবন পানির জন্য কষ্ট করলেও শেষ বয়সে এসে আর পারছি না। আর এ গভীর নলকুপ বসাতে যে খরচ হয় তা আমাদের মত হত দরিদ্র পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। ফলে বাধ্য হয়েই ওই নদী থেকে উঠানো কুপের পানি খেতে হয়।

একই ইউনিয়নের ঘিলাগড়া গ্রামের পূর্ণিমা মান্দিক জানান, মাটির নিচে পাথর থাকায় গভীর নলকুপ ছাড়া পানি উঠানো সম্ভব নয়। গ্রামের বেশির ভাগ পরিবার গরিব ও দিনমজুর। গ্রামে কোন উৎসব বা অনুষ্ঠান হলে পানির জন্য ঝামেলায় পড়তে হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক জানান, পাহাড়ি এলাকায় মাটির নিচে প্রচুর পরিমাণের পাথর থাকার কারণে সেখানে কোন টিউবওয়েল স্থাপন সম্ভব হয় না। কম লেয়ারের নলকূপের পানি লালচে থাকে আর পাহাড়ি ঝর্ণায় পানি স্বচ্ছ থাকায় সকলেই তা ব্যবহার করে। এক সময় আমরাও ব্যবহার করেছি। আর কিছু কিছু জায়গায় সরকারী নলকূপ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

সমস্যা সমাধানে ধোবাউড়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের উপ সহকারী প্রকৌশলী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে বিগত সময়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ২০টি রিংওয়েল স্থাপন করা হয়েছে।

আপাতত রিংওয়েল আর দেয়া হচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করব মেশিনের মাধ্যমে টিওবওয়েল স্থাপনের জন্য। সেক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে রিংওয়েল স্থাপন করা হবে।

অপরদিকে হালুয়াঘাট উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের উপ সহকারী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান, এলাকা পরিদর্শন গিয়ে বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। ভুক্তভোগীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আগামী বরাদ্দে এ বিষয়টি অগ্রাধিকার থাকবে।