ময়মনসিংহে ১২০০ বছর পর গায়েবি মসজিদে হঠাৎই আজানের সুর!

প্রকাশিত: ১০:৫৪ অপরাহ্ণ, মে ৪, ২০২১

ময়মনসিংহে প্রায় ১২০০ বছর পূর্বের গায়েবি মসজিদে হঠাৎই আজানের সুর শুনতে পাওয়া যায়। কিছুদিন আগেও মসজিদটির চারপাশ ঘিরে ছিল জঙ্গল ও জীব-জন্তুর আবাসস্থল। দিন-দুপুরে ভয়ে কেউ যেত না, এটিকে জিনের মসজিদ তথা গায়েবি মসজিদ নামেও ডাকতো সবাই।

জেলার নান্দাইল উপজেলার মুশুল্লী ইউনিয়নের নগরকুচুরী গ্রামে এই গায়েবি মসজিদের অবস্থান।

স্থানীয়রা জানান, তারা তাদের বাপ-দাদার তিন-চার পুরুষেও জানেন না মসজিদটি কীভাবে স্থাপিত হয়েছিল। তবে মুখে মুখে এটি একটি গায়েবি মসজিদ নামেই পরিচিত।

অনেকেই বলছেন আনুমানিক ১২০০ বৎসর পূর্বে এটি স্থাপিত হয়েছে। এটিকে জিনের মসজিদ তথা গায়েবি মসজিদ নামেও সবাই ডাকেন।

কেউ কেউ ধারণা করছেন, ওই গায়েবি মসজিদটি শাহ-সুলতান কমির উদ্দিন রুমী (রা.)-এর সময়কালে তাদের একজনেরই ধর্মীয় উপাসনালয় তথা সাধনার স্থান হিসেবে অলৌকিকভাবে স্থাপিত হয়েছিল মসজিদটি।

কথিত আছে, একজন বাকপ্রতিবন্ধী লোক জঙ্গলের ভিতরে ঢুকে পড়লে মসজিদটির নির্মাণ কাজ দেখতে পায়, তখন সঙ্গে সঙ্গেই সে অসুস্থ হয়ে মারা যায়। এতে সবাই ধারণা করে যে বাকপ্রতিবন্ধী লোকটি তা দেখে ফেলায় গায়েবি মসজিদের বাকি কাজ বন্ধ করে দেয় জিনেরা।

এরপর বহু যুগ পেরিয়ে গেলেও সেখানে যাওয়ার কেউ চিন্তা করে না। কিন্তু আধুনিক সভ্যতার কারণে ও জনবসতি বৃদ্ধি পাওয়া গাছ-পালা কেটে ফেলে জঙ্গল পরিষ্কার করা হয়।

ফলে গত কয়েক মাস আগে হঠাৎই আজানের সুর ভেসে উঠে চারিদিকে এবং লোকজন দলে দলে আসে উক্ত মসজিদটিকে দেখতে ও জানতে।

পরে জানা গেছে, গায়েবি মসজিদ নামে পরিচিত অজানা প্রত্নতাত্ত্বিক এই পুরাতন ভবনে নিয়মিত নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করেছেন গ্রামের মানুষ। পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে মাসখানেক ধরে উক্ত গায়েবি মসজিদটির সংস্কারসহ মসজিদের পাশেই একটি এতিমখানা (মাদ্রাসা) স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়েছে।

দেখা যায়, বহু যুগ আগে প্লেটের মতো ১ ইঞ্চি পুরো ৭-৮ ইঞ্চি বর্গফুটের ইট দিয়ে করা হয়েছে ৩ ফুটেরও বেশি চওড়াবিশিষ্ট প্রতিটি দেওয়াল। যার গায়ে ইসলামী নিদর্শনের বিভিন্ন কারু-শিল্পকর্ম দেখা যায়।

মসজিদটির একপাশে দুটি বড় খোলা দরজা এবং অপর দুইপাশে রয়েছে ছোট ছোট দুটি সুরঙ্গের মতো দরজা। উপরে ছাদ ও ভিতরের মেঝেটি পাকা করা হয়নি।

তবে এরচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো ভিতরে প্রবেশের তিনটি রাস্তায় কোনো ধরনের আলাদাভাবে দরজা ফিটিং করার মতো কোনো অবস্থান দেখতে পাওয়া যাইনি।

কিন্তু বর্তমানে এলাকাবাসী মসজিদের পুরাতন দেওয়ালের সঙ্গে ঘেঁষে কংক্রিটের পিলার দিয়ে উপরে টিনের ছাউনি দিয়েছেন এবং মসজিদের ভিতরে ও বাইরে নামাজ আদায় করতে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে পাকাকরণ করা হয়েছে।

সেখানে এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ জুমার নামাজ আদায় করার পাশাপাশি খতমে তারাবির নামাজও আদায় করা হচ্ছে।

উক্ত মসজিদ কমিটির বর্তমান আহ্বায়ক মোখলেছুর রহমান রিপন জানান, সবার সহযোগিতায় মসজিদটিকে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার পাশাপাশি এখানে প্রায় ৫০ শতক জমি থাকায় বিনামূল্যে ইসলামী শিক্ষাদান হিসেবে এতিমখানা ও নুরানি মাদ্রাসা চালু করা হচ্ছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইফতেকার উদ্দিন ভূঁইয়া বিপ্লব জানান, গায়েবি মসজিদটি তথা প্রত্নতাত্ত্বিক বিষয়টি ধরে রাখতে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় সেখানে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সংসদ সদস্য মো. আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিনের পক্ষ থেকে ঢেউটিন অনুদান পাওয়া গেছে এবং কিশোরগঞ্জের মাওলানা আব্দুল হালিমের সহযোগিতায় কমির উদ্দিন রুমীর (রা.) নামে এতিমখানা ও নূরানি হাফিজিয়া মাদ্রাসা স্থাপনের কাজ চলছে। সুত্রঃ যুগান্তর